গত বৃহস্পতিবার সিনেসিস আইটির দরপত্র জেতার নির্দেশনা (নোটিফিকেশন অ্যাওয়ার্ড) জারি করা হয়।
রিভ সিস্টেম, ডেটাএজ, ডিজিকন টেকনোলজিস ও সিনেসিস আইটি—এ চার প্রতিষ্ঠানের মধ্যে সিনেসিস আইটি কাজটি পায়।
বিটিআরসি ২০১২ সালে প্রথম অবৈধ মুঠোফোন বন্ধের উদ্যোগ নেয়। তবে নানা কারণে তা এতদিন বাস্তবায়ন সম্ভব হয়নি। এ বছর দরপত্র আহ্বান ও একটি কোম্পানিকে নির্বাচিত করার মাধ্যমে পরিকল্পনাটি বাস্তব রূপ পাচ্ছে। বিটিআরসির নির্দেশনায় বলা হয়েছে, সিনেসিস আইটিকে জামানত জমা দিয়ে চুক্তি করতে হবে ২ ডিসেম্বরের মধ্যে।
সূত্র জানিয়েছে, চুক্তি করার ১২০ কার্যদিবসের মধ্যে সিনেসিস আইটিকে পুরো ব্যবস্থাটি চালু করতে হবে। এতে সর্বশেষ সময় দাঁড়ায় আগামী এপ্রিল মাস। তবে বিটিআরসি প্রক্রিয়াগত কাজ শেষ করে যত দ্রুত সম্ভব কার্যক্রম চালু করতে চায়। এ ক্ষেত্রে প্রস্তুতি আছে সিনেসিস আইটিরও।
এ বিষয়ে বিটিআরসির জ্যেষ্ঠ সহকারি পরিচালক (গণমাধ্যম) জাকির হোসেন খান জানান, কমিশন আগামী বছরের শুরুর দিকে অবৈধ মুঠোফোন বন্ধের কার্যক্রম চালুর লক্ষ্য নিয়ে কাজ করছে।
বিটিআরসি ২০১২ সালে প্রথম অবৈধ মুঠোফোন বন্ধের উদ্যোগ নেয়। তবে নানা কারণে তা এতদিন বাস্তবায়ন সম্ভব হয়নি। এ বছর দরপত্র আহ্বান ও একটি কোম্পানিকে নির্বাচিত করার মাধ্যমে পরিকল্পনাটি বাস্তব রূপ পাচ্ছে।
নকল মুঠোফোন, অবৈধ আমদানি, চুরি ও রাজস্ব ক্ষতি রোধে এনইআইআর ব্যবস্থা চালু করছে বিটিআরসি। এর মাধ্যমে দেশে বৈধভাবে আমদানি ও উৎপাদিত মুঠোফোনের তথ্যভাণ্ডারের সঙ্গে মোবাইল নেটওয়ার্কে চালু হওয়া ফোনের আইএমইআই (মুঠোফোন শনাক্তকরণ নম্বর) মিলিয়ে দেখা হবে। অবৈধ, চুরি যাওয়া ও নকল মুঠোফোন চালু করা যাবে না।
বিটিআরসি ও সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানিয়েছেন, মোবাইল অপারেটরগুলোর কাছে ইকুইপমেন্ট আইডেনটিটি রেজিস্ট্রার (ইআইআর) ব্যবস্থা থাকবে। এর ফলে নতুন কোনো মুঠোফোন নেটওয়ার্কে যুক্ত হলে তা তাৎক্ষণিকভাবে জানবে এনইআইআর পরিচালনাকারী। তখন মুঠোফোনটি বৈধ না অবৈধ, তা যাচাই করা হবে। তবে এখন অপারেটরদের সবার কাছে ইআইআর নেই। বিশেষ ব্যবস্থায় তথ্যগুলো তথ্যভাণ্ডারে নেওয়া হবে।
আপনার ফোনটি কী বন্ধ হবে
বিটিআরসি ও মোবাইল অপারেটর সূত্র জানিয়েছে, দেশের নেটওয়ার্কে এখন প্রচুর মুঠোফোন রয়েছে, যেগুলো নকল। আবার অবৈধভাবে দেশে আনা ফোনও রয়েছে। আপনি যে ফোনটি ব্যবহার করেন, সেটি হতে পারে বিদেশ থেকে আত্মীয়ের মাধ্যমে আনা।
বিটিআরসির কর্মকর্তারা বলছেন, ২০১৯ সালের আগস্টের আগে কেনা নেটওয়ার্কে সচল থাকা মুঠোফোন বন্ধ করা হবে না। আগস্টের পরে কেনা অবৈধ ফোনের বিষয়টি নিয়ে চূড়ান্ত কোনো সিদ্ধান্ত এখনো হয়নি। এ ক্ষেত্রে নিবন্ধনের একটা সুযোগ দেওয়া হতে পারে।
এনইআইআর চালু নিয়ে গত ৯ জুলাই বিটিআরসির এক বৈঠকের কার্যবিবরণীতে দেখা যায়, অপারেটরেরা সচল থাকা অবৈধ মুঠোফোনগুলো চালু রাখার বিষয়টি তুলেছিল। পরে বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয় যে, এনইআইআর চালু পর এ বিষয়ে সরকার সিদ্ধান্ত নেবে এবং নির্দেশনা জারি করা হবে।
অবশ্য ২০১৯ সালের জানুয়ারিতে মুঠোফোন বৈধভাবে আমদানি করা বা দেশে উৎপাদিত কি না, তা যাচাইয়ে তথ্যভান্ডার চালু করা হয়েছিল। খুদে বার্তা পাঠিয়ে গ্রাহকদের বৈধ বা অবৈধ মুঠোফোন চিহ্নিত করার সুযোগ দেওয়া হয়েছিল। বাংলাদেশ মোবাইল আমদানিকারক সমিতির (বিএমপিআইএ) সহায়তায় বিটিআরসি এই তথ্যভান্ডার তৈরি করে। এরপর বিটিআরসি বিভিন্ন সময় বিজ্ঞপ্তি জারি করে বলেছে, মোবাইল ফোন কেনার সময় তা বৈধভাবে আমদানি করা কিনা তা যাচাই করতে হবে।
মোবাইল ফোনের বৈধতা যাচাইয়ের পদ্ধতি হল মোবাইল ফোনের মেসেজ অপশনে গিয়ে KYD স্পেস ১৫ ডিজিটের আইএমইআই নম্বর লিখে 16002 নম্বরে পাঠাতে হবে। ফিরতি মেসেজ বা খুদে বার্তায় বৈধ না অবৈধ, তা জানা যাবে। মোবাইল ফোনের মোড়কে স্টিকারে আইএমইআই নম্বরটি থাকে। এর বাইরে *#06# ডায়াল করে আইএমইআই নম্বর জানা যায়।
প্রশ্ন হলো, আগস্টের পরে অবৈধভাবে আমদানি করা ফোন বিটিআরসি বন্ধ করতে পারবে কিনা। কারণ এ সময়ে বিদেশ থেকে হাতে করে নিয়ে আসা ও স্বজনদের জন্য প্রবাসীদের পাঠানো ফোন নিবন্ধনের কোনো ব্যবস্থা ছিল না।
বিদেশ থেকে আনা ফোনের কী হবে
বিটিআরসি সূত্র জানিয়েছে, এনইআরআই চালু হলেও মানুষ বিদেশ থেকে আসার সময় মুঠোফোন নিয়ে আসতে পারবেন। তবে সেটার নিবন্ধন নিতে হবে। নিবন্ধনের জন্য ব্যবস্থা রাখবে বিটিআরসি। পাশাপাশি কয়টি মুঠোফোন আনা যাবে, বছরের কয় বার আনা যাবে, এসব ক্ষেত্রে সীমা নির্ধারিত থাকবে।
বাংলাদেশ মোবাইল ফোন ইম্পোর্টার্স এসোসিয়েশনের (বিএমপিআইএ) মতে, দেশের মুঠোফোনের প্রায় ৩০ থেকে ৩৫ শতাংশ অবৈধ পথে আমদানী হয়। যার আনুমানিক বাজার মূল্য হতে পারে প্রায় ৪ হাজার কোটি টাকা। ২০১৯-২০ অর্থবছরে স্মার্টফোন আমদানির উপর সরকার মোট করভার ৩২ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৫৭ শতাংশ নির্ধারণ করে। এতে বৈধ আমদানিতে খরচ আরও বেড়েছে। অবশ্য দেশে পাঁচ থেকে ছয়টি প্রতিষ্ঠান মুঠোফোন সংযোজন ও উৎপাদন করছে।
দেশে যেসব ব্রান্ড মুঠোফোনের কারখানা করেছে, তাদের সঙ্গে প্রতিযোগী ব্র্যান্ডগুলো পেরে উঠছে না। দেশজুড়ে বহু দোকানে নির্ধারিত পরিবেশকের বাইরে তুলনামূলক কম দামে স্মার্টফোন বিক্রি হয়। বিভিন্ন সময় এসব ফোন বিক্রেতাদের বিরুদ্ধে অভিযান চালানো হয়েছে।