জামদানি, ই-কমার্স ও সোশ্যাল এন্ট্রপ্রেনিউরশিপ

 



সোশ্যাল এন্ট্রপ্রেনিউরশিপ হচ্ছে সামাজিক উদ্যোগ বা সামাজিক যেকোন সমস্যা খুঁজে বের করে তা সমস্যা সমাধানে নিজের উদ্যোগকে কাজে লাগানো। সোশ্যাল এন্ট্রপ্রেনিউরশিপ লাভজনক এবং অলাভজনক দু-ভাবেই হতে পারে। যেহেতু সামাজিক উদ্যোগ সমাজের এবং মানুষের উপকারের জন্য করা হয় তাই এখানে লাভজনক কোন কিছু থাকেনা বললেই চলে। সামাজিক উদ্যোগ গ্রহণ করার উদ্দেশ্যই হলো বিনা লাভে একটি সমস্যা সমাধানে কাজ করে যাওয়া। বর্তমানে অনলাইনের মাধ্যমেও অনেক উদ্যোক্তা সামাজিক উন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছে। তাদের এই উদ্যোগের ফলে সামাজিক বিভিন্ন সমস্যা সমাধান হচ্ছে এবং তার পাশাপাশি নতুন নতুন কর্মসংস্থান, নতুন উদ্যোগ এবং পুরনো অনেক উদ্যোগও নতুন করে নিজেদের সমস্যা সমাধানের মাধ্যমে সামনে এগিয়ে যাচ্ছে। সামাজিক উদ্যোগ যেমনি সামাজিক পরিবর্তন ঘটায় তেমনি দেশের বিভিন্ন সমস্যার সমস্যা সমাধানের মাধ্যমে দেশের সমৃদ্ধিতে ভুমিকা রাখে।

দেশি পন্য সামাজিক উদ্যোগের ভূমিকা অপরিসীম। আমাদের অনেক পুরনো ঐতিহ্য রয়েছে যা শুধুমাত্র সরকারি এবং বেসরকারি পর্যায়ে সহায়তা না পাওয়ার কারনে হারিয়ে যাচ্ছে। যদি এই ঐতিহ্য গুলোকে বাঁচিয়ে রাখতে হয় তাহলে অবশ্যই দেশি পণ্যের উদ্যোক্তাদের এগিয়ে আসতে হবে। দেশি পণ্যের একজন উদ্যোক্তা তার উদ্যোগের মাধ্যমে সামাজিক যেকোন একটা সমস্যা খুঁজে বের করে সেখানে নিজেদের উদ্যোগের মাধ্যমে সমস্যার সমাধান করতে পারেন। এক্ষেত্রে যেমন হারিয়ে যেতে বসা ঐতিহ্য গুলো পূনরায় মর্যাদা পাবে তেমন এই খাতগুলোতে জড়িয়ে থাকা প্রতিটি মানুষ আবার ঘুরে দাঁড়াতে পারবেন। বেকারত্ব রোধ হবে এবং দেশি পণ্যের প্রসার সব যায়গায় ছড়িয়ে পরবে। একজন দেশি পণ্যের উদ্যোক্তা সামাজিক উদ্যোগ গ্রহণের মাধ্যমে দেশিও পণ্যের বাজার বৃদ্ধির সাথে দেশি পণ্যের সাথে জড়িত মানুষের সমস্যা সমাধানে কাজ করে থাকে।

জামদানী প্রাচীন কাল থেকে যুগ যুগ ধরে এখনোও পর্যন্ত তার ঐতিহ্য বহন করে চলছে। কিন্তু এই ঐতিহ্যর সাথে জড়িত মানুষগুলো দিনদিন তাদের পরিশ্রমের নায্য মূল্য না পেয়ে অনেকেই জামদানী তৈরিতে আগ্রহ হারিয়ে ফেলছে। তবে সামাজিক উদ্যোগের মাধ্যমে এই সমস্যার সমাধান কিছুটা হলেও লাগব করা সম্ভব। যারা জামদানি নিয়ে কাজ করছেন তারা যদি জামদানী নিয়ে কাজ করেন, সামাজিক বিভিন্ন যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার বাড়াতে সক্ষম হন এবং ইন্টারনেটে জামদানী নিয়ে তথ্যবহুল বিভিন্ন লিখালিখি করেন তাহলে জামদানী নিয়ে অনেকের যে ভুল ধারণা তা দূর হবে। কারন জামদানী নিয়ে অনেকে ভূল ধারণার কারনে এর প্রতি দুর্বলতা থাকলেও কেউ দাম দিয়ে জামদানী ক্রয় করতে আগ্রহ প্রকাশ করেন না। জামদানীর চাহিদা যত বৃদ্ধি পাবে তেমনি সেই খাতে জড়িয়ে থাকা মানুষের মধ্যে আবার আগ্রহ ফিরে আসবে এবং এর ফলে অনেক কর্মসংস্থান তৈরি হবে। নতুন উদ্যোক্তা তৈরি হবে। বর্তমানে জামদানীর চাহিদা বাড়ার কারনে তাঁতিদের সুদিন ফিরতে শুরু করেছে।

বর্তমানে ই-কমার্স ইন্ডাস্ট্রিতে ব্যাপক পরিবর্তন এসেছে। কারন করোনা পরিস্থিতির কারনে যখন দেশে লকডাউন চলছিল এবং আমদানি-রপ্তানি প্রায় কয়েকমাস বন্ধ ছিল তখন দেশি পণ্যের চাহিদা ব্যাপক হারে বেড়ে যায় এবং তখন শুধুমাত্র ই-কমার্সের মাধ্যমে জরুরী সেবা এবং পণ্য ডেলিভারির কাজ চলে। অনেকে চাকুরী হারায় এবং যারা বিদেশি পণ্য নিয়ে কাজ করতো তাদের ব্যবসায়ও অনেক লস হয়। এই সুযোগে অনেক নতুন উদ্যোক্তা দেশি পন্য নিয়ে অনলাইনে তাদের উদ্যোগ শুরু করেন এবং এর ফলে যেমন অনেক কর্মসংস্থান সুযোগ হয় তেমনি দেশি পন্য নিয়ে মানুষের মধ্যে ইতিবাচক পরিবর্তন আসে। তাই সামাজিক বিভিন্ন উদ্যোগের মাধ্যমে যেকোন একটি সমস্যাকে চিহ্নিত করে যদি বিভিন্ন পর্যায়ে কাজ করা যায় তাহলে দেশি পণ্যের ই-কমার্স ইন্ডাস্ট্রি আরও বড় হবে। তাই সরকারি এবং বেসরকারি পর্যায়ে সবাইকে সামাজিক উদ্যোগ নিয়ে দেশি পণ্যের ই-কমার্স ইন্ডাস্ট্রির সাথে জড়িয়ে বিভিন্ন সমস্যা গুলোকে খুঁজে বের করে কাজ করতে হবে।

যদি দেশি পণ্যের সাথে জড়িয়ে থাকা মানুষ গুলোর সমস্যা চিহ্নিত করে সরকারি এবং বেসরকারি পর্যায়ে সামাজিক উদ্যোগ গ্রহণ করা হয় তাহলে নারীর আয় বাড়ার সাথে সাথে সামাজিক অনেক প্রতিবন্ধকতা দূর হবে। এতে করে দেশে বেকারত্বের সংখ্যা হ্রাস পাবে এবং তরুণ উদ্যোক্তারা নিজেদেরকে দেশি পন্য প্রচার এবং প্রসারে নিজেদের উদ্যোগ গ্রহণ করতে আগ্রহী হয়ে উঠবে। যে দেশের দেশি পণ্যের ই-কমার্স যত বেশি সমৃদ্ধিশালী সে দেশ অর্থনৈতিক দিক থেকে তত বেশি এগিয়ে থাকবে।

সামাজিক যেকোন উদ্যোগ গ্রহণ করার আগে আমাদের চিন্তা করতে হবে তা কতটা টেকসই হবে। কারন সামাজিক উদ্যোগ গুলো হয় কোন একটি সামাজিক সমস্যাকে চিহ্নিত করে তার সমাধান করা। যখন কোন একটি সমস্যা নির্দিষ্ট কোন লক্ষকে সমাধানের জন্য করা হয় তাহলে সেখান থেকে আরও নতুন আডিয়া পাওয়া যায়।

টেকসই সামাজিক উদ্যোগ এর জন্য যে সমস্যাটি নিয়ে কেউ কাজ করতে চাচ্ছে সেই বিষয় তার জ্ঞান থাকা প্রয়োজন। কারন সমস্যার গভীরতা এবং তা থেকে পরিত্রাণ পেলে কি সম্ভাবনার ধার উন্মোচিত হতে পারে সে সম্পর্কে জ্ঞান থাকলে অবশ্যই তা টেকসই হবে।

টেকসই সামাজিক উদ্যোগ এর জন্য মানসিক প্রস্তুতি থাকতে হবে। কারন যে সমস্যা সমাধানের লক্ষ্য আপনি কাজ করবেন সেখানে অনেক বাঁধা বিপত্তি আসবে সেখানে আপনাকে টিকে থাকতে হলে মানসিক ভাবে প্রস্তুত থাকতে হবে।

সামাজিক উদ্যোক্তারা যদি গ্রুপ ভিত্তিক কোন উদ্যোগ নিয়ে থাকেন তাহলে সেটা আরও ভালো। তারা বিভিন্ন গবেষণা এবং সেই সমস্যা সমাধানের লক্ষ্য নানাবিধ কার্যক্রম গ্রহণ করতে পারে এতে করে সবাই মিলে একটি সমাধানের লক্ষ্য পৌঁছাতে পারবে।

সামাজিক যেকোন উদ্যোগকে টেকসই রূপ দিতে হলে অবশ্যই সেখানে সরকারি সহযোগিতা প্রয়োজন। একজন উদ্যোক্তা সামাজিক উদ্যোগ গ্রহণের মাধ্যমে একটি চিহ্নিত সমস্যাকে সমাধানের লক্ষ্য নিস্বার্থ ভাবে কাজ করে যান কিন্তু সেখানে তার আর্থিক সহযোগিতা এবং সামাজিক নিরাপত্তা দুটির সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন তাই এক্ষেত্রে সরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানকে এগিয়ে আসতে হবে তাকে সাহায্য করার জন্য। তাহলেই একটি টেকসই সামাজিক উদ্যোগ সফল হবে।

বেসরকারি পর্যায়ের প্রতিষ্ঠান গুলোও নানাভাবে এসব কাজগুলোর সাথে জড়িয়ে আছে যারা মূলত গ্রামীণ বিভিন্ন সমস্যা সমাধানের লক্ষ্য বিভিন্ন ধরনের সামাজিক উদ্যোগ গ্রহণ করে কাজ করে যাচ্ছে।

সুবিধাবঞ্চিত এবং মানবিক দিক থেকে পিছিয়ে থাকা মানুষ গুলোর জন্য টেকসই সামাজিক উদ্যোগ গ্রহণ করা প্রয়োজন। যারা এসব সামাজিক উদ্যোগ গ্রহণ করছেন তাদেরকে সহযোগিতা করে আরও উৎসাহিত করতে হবে যেন টেকসই সামাজিক উদ্যোগ এর সফলতা আমরা দেখতে পাই।

Post a Comment (0)
Previous Post Next Post